2020/06/05

Director of Arabic Network in the Philippines ambassadors Dr Eden Soriano Trinidad : একজন পুলিশ, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাস্তবতা # An article written by Mohammad Mohi Uddin IFCH Ambassador in Bangladesh





# একজন পুলিশ, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাস্তবতা #

An article written by Mohammad Mohi Uddin
IFCH Ambassador in Bangladesh

আমার নিকটস্থ বন্ধুবান্ধব বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বড় ভাই পুলিশ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন; সেই সুবাদে পুলিশের পেশা সম্পর্কে খানিকটা জানার সৌভাগ্য হয়েছে | উপলব্ধিটুকু শেয়ার করতে চাই |
বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম রনি (এডিশনাল এসপি, ওসমানীনগর সার্কেল) আমাকে বললেন,  মহি, এসো একদিন, দেখে যাও আমরা পুলিশরা- কি করি, না করি: তুমি লেখক মানুষ বাস্তবতা দেখলে কিছু লিখার উপকরণ পেলে পেতেও পারো |

এক রাতে উনার সাথে বের হলাম, রাত প্রায় একটা বাজে | বালাগঞ্জ থানার দিকে যাত্রা শুরু, পৌছালাম রাত দেড়টার দিকে, গিয়ে দেখলাম থানার ওসি সাহেব অপেক্ষায় আছেন, সাথে পুলিশ সদস্যরা তো আর আছেনি | আমি নিজের কাছে জানতে চাইলাম দুইটা পর্যন্ত তাদের স্যার আসবেন, কি না-আসবেন সেটা বিষয় নয়, বিষয় হলো সজাগ থাকা চাই ! তাহলে ওরা কখন ঘুমায়?
আমি না হয় শখ করে একদিন আসছি,  শখ করে তো গাজীর গীত একরাত গাওয়া-ই যায় | সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস সম্ভব নয় | তাহলে পুলিশ কোন চেতনায় উদ্দীপ্ত যে, সাধারণ মানুষ যা পারে না সেটাকেই নিত্যনৈমত্তিক ব্যপার বানিয়েছে ওরা?

রাত আড়াইটার দিকে যখন ফিরতে শুরু করলাম, দেখলাম বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে পুলিশ পাহারা় রত অবস্থায় | নিজের কাছে আবারো জানতে চাই, অত্র অঞ্চলের তাবৎ মানুষ যখন ঘুমে, ওরা তখন হাসি মাখা মুখে সজাগ কেন?
ওদের কি নিজের প্রতি কোন আল্লাদ নেই?
আমি নিজে একটা কলেজে শিক্ষকতায় আছি, সপ্তাহে একদিন- প্রথম পিরিয়ডের ক্লাস আমার; সেদিন সকাল উঠতে হয়, তাও সকাল বলতে 10:30 এ আমার ক্লাস | ওই দিনটার জন্য খুব বিরক্ত লাগে! রাতের ওই পুলিশদের প্রহরার দৃশ্য দেখে, আমি নিজের কাছে নিজেই ক্ষমা চেয়ে নেই! দুপুরের ভেতরে পাঠদান শেষ করে; বিকালে বন্ধু-বান্ধবের সাথে গল্প করে; রাতে পরিবারের মানুষের সাথে আনন্দঘন সময় কাটিয়ে; রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরেও সকালে উঠতে গেলে কষ্ট হচ্ছে, তাহলে সারারাত জেগে একজন পুলিশ আবার নয়টায় ডিউটিতে আসে এটা কেমনে? কোন তাগিদে?

তখন শীতকাল | আপনারা চিন্তা করতে পারেন, রাতে কম্বল গায়ে দিয়ে, আয়েশী বিছানায় কাত হয়ে, তারপরও ঘুম নিয়ে কত অভিযোগ! এই পুলিশরা শীতের রাস্তায় কেমন করে রাত যাপন করে? ওদের কি কুয়াশা লাগে না? নাকি ওরা মানুষ নয়?!

বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে আমরা ইচ্ছামতো ছুটি পাই অথচ ওরা পায় না |
নিজের সন্তান যখন ফোন করে বলে, বাবা ঈদের দিন আসবা তো? ফোনের অপরপ্রান্তে তখন রাজ্যের সমস্ত নীরবতা; কেননা হতভাগা বাবা জানেন তিনি ঈদে সন্তানের কাছে যেতে পারবেন না: যেহেতু তিনি পেশায় একজন- পুলিশ |

বিয়ের পর কে না চায় তার নব সহধর্মিনীকে সময় দিতে? আপনার কি জানেন অনেক তরুণ পুলিশ বিয়ে করার পর স্ত্রীর পাশে থাকতে চাওয়ার এমন মায়াবী আবেগ একটু একটু করে মুছে ফেলে; কেননা দেশের পাশে যে তার থাকতে হয়! এরকম না বলা অনেক দীর্ঘশ্বাস চাপা থাকে, কাউকে বলতে পারেনা; বলবেই বা কেমন করে? সে যে পেশায় একজন- পুলিশ !

প্রত্যেক মানুষই তো চায় তার প্রিয়জন এর হাতের খাবার খেতে | প্রিয়জনের তালিকা থেকে সবাইকে বাদ-ই দিলাম, শুধু মায়ের কথায় যদি বলি, সব ছেলেই তো এমনকি বখে যাওয়া ছেলেও মায়ের হাতের রান্না খাওয়ার গভীর আকুতি প্রকাশ করে | আমরা তো প্রায়ই মায়ের হাতের রান্না খাওয়ার সুযোগ পাই |আপনারা কি জানেন 90% পুলিশের সেই সৌভাগ্য হওয়া তো দুরের কথা নিজের খেয়াল-খুশি মতো নিজের হোস্টেলের ডাইনিং এ পর্যন্ত সব সময় খাবার খাওয়া সম্ভব হয় না; খাবার সারতে হয় পথের ধারে কিংবা গাড়িতে |

আমরা সব সময় নিজের পেশা বা ক্ষেত্রকে উপরে রাখতে চাই বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে | আমরা যারা অন্য পেশায় আছি, ধরা যাক, আমি আমার শিক্ষকতা দিয়ে উদাহরণ দেই |
একজন শিক্ষক সকালে কলেজে গেলেন, অধিকাংশ সময় দুপুর কিংবা বিকেলের মধ্যেই পাঠদান শেষ হয়ে যায়, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বেদনার চেয়ে আনন্দটাই বেশি; সামগ্রিক বিবেচনায় পরিশ্রমের সাথে মিলালে আমার কাছে মনে হয় প্রাপ্তিটাই বেশি |
অন্যদিকে 24 ঘন্টা দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য কিংবা অফিসারের বেতন তার পরিশ্রমের সাথে মিলালে মনে হবে- রাষ্ট্র পুলিশের সাথে প্রতারণা করছে; আমরা কখনো কি এরকম চিন্তা করেছি?
পুলিশের সবাই ভালো আমি এমনটা বলতে চাচ্ছি না | অবশ্যই তাদের মধ্যে খারাপ আছে | দোকান থেকে মুকাম, উঠোন থেকে সভা পরিষদ, সবখানে সবাই ভালো হয়ে যাবে- এমন পেশা পৃথিবীর কোথাও নেই |
এটাই সরল বাস্তবতা |

আগে ভাবতাম নিজের বেতনটা খুব হালাল | এখন নিজের কাছে জানতে চাই, সরকার কিংবা প্রতিষ্ঠান যে টাকা দেয় সেই অনুপাতে পরিশ্রম হচ্ছে তো? ক্লাস ঠিকমতো নিচ্ছি তো? ক্লাস নিলেও একাগ্রচিত্তে ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিক মত পড়াচ্ছি তো?
উত্তর হিসেবে যা পাই, আশাবাদী হতে পারি না ! তখন মনে মনে ভাবি, আল্লাহ-ই ভালো জানেন কার দায়িত্ব পালন কেমন, কতটুকু |

 বলতে গেলে অনেক কিছু বলতে পারব, থাক আজ এখানেই |
শেষমেষ একটা বাস্তব ঘটনা দিয়ে শেষ করি |
একজন এএসপিকে, সারারাত ফোন অন রাখতে হয়, চোখ বুজে ঘুমালেও, মন খুলে মোবাইলের রিং এর কাছে রাখতে হয়; কখন ইমারজেন্সি ফোন আসবে ! (একজন বিসিএস ক্যাডার উর্দ্ধতন কর্মকর্তার যদি এই অবস্থা হয়, সে ক্ষেত্রে অধস্তন কর্মকর্তাদের বাস্তবতা কেমন, সেটা আপনাদের কল্পনা থেকেই আসুক |)
কিছুক্ষণ পর পর যখন ফোন আসে, পাশে শুয়ে থাকা ছোট্ট মেয়েটি জানতে চায়- "বাবা, এত ফোন আসে কেন? ঘুমাতে পারিনা..." তখন একজন পুলিশ বাবা হতভম্বের মত মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায়, দেখতে পায় একটি হ্যাঙ্গারে টাঙ্গানো তারকাখচিত পুলিশের দায়িত্বশীল সেই পোশাক!!

মোহাম্মদ মহি উদ্দিন 
প্রভাষক, ইংরেজি
ঢাকাদক্ষিণ সরকারি কলেজ, সিলেট |
05 জুন 2020